একদিন হঠাৎ দেখি খুব চেঁচামেচি হইতেছে । মা বলল, কি হয়েছে এত সব চিল্লাই কেন রে ? আমি ছুটলাম গন্তব্যস্থানে । আমি গিয়ে দেখি ক্লাবে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দু দিকে দুজন বসে আছে । আর কতকগুলি গ্রামের লোক তাহাদের জিজ্ঞাসা করে যাইতেছে, তোদের বাড়ি কোথায় ? ছেলেটা বলল, আমার বাড়ি কামারশাল । আর মেয়েটি বলল, আমার বাড়ি চাইপাট । কেউ একজন বলে উঠলো, কতদিন ধরে তোদের চলছে ? মেয়েটির মুখে আর কথা নেই । ছেলেটাকে একজন থাপ্পড় মেরে বলল, করার সময় এত ভাবিস নি । তারপর ছেলেটা একটু কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল দুই বছর ধরে ।
শুনতে পাই কে বলছে যেন ওদের দুজনকে ভালো করে বাধ্ । কে বলছে, বেধে আর কি হবে ওদের বাড়িতে ফোন কর আর পরিবারকে আসতে বল্। বেশ কতক্ষণ কথা চলতেই থাকল । তারপর একজন ফোন বার করে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করল নাম্বার বল্ । ছেলেটা বলল 9732565778 । আর ফোন ডায়াল করে কানে ফোন ধরে ছেলেটাকে বলল , তোর নাম বল । ছেলেটা বলল প্রিয়রঞ্জন । কেউ ফোন উঠানোর পর লোকটা জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি প্রিয়রঞ্জনের বাড়ি । ওদিক থেকে বলল, প্রিয়রঞ্জন কে? এখানে কেউ প্রিয়রঞ্জন বলে নেই। শুনেই এক থাপ্পড় মারল ছেলেটাকে । ছেলেটা বলে আমাকে মাফ কর । প্লিজ বাড়িতে বলেন নাই । আমাকে মেরে ফেলবে । না তুই বল বাড়ির নাম্বার । কিছুক্ষণ পরে ছেলেটা নাম্বার বলল 9830565778 । লোকটি আবার ফোন করল এবং তার পরিবারকে জানালেন এবং যত শীঘ্রই সম্ভব আসতে বললেন । তারপর মেয়ের ঘরে ফোন করে জানালেন । মেয়ের বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি চলে এল । কিন্তু ছেলের বাড়ি থেকে এখনো কেউ এল না । আবার ফোন করা হল ছেলের বাড়িতে । বাড়ি থেকে বলল তারা বেরিয়ে গেছে আধ ঘণ্টা আগে । যাইহোক দশ মিনিট পরে এসে গেল । তারপর ক্লাবে একটা বিচার হল । আর ক্লাব কিছু টাকা উভয় পক্ষের কাছ হতে নিয়ে তাদের বিদায় দেয় । তারপর দিন পনেরো কেটে গেল । হঠাৎ একদিন স্কুলে
গিয়ে শুনি মেয়েটার বিয়ে । সব বন্ধুরা মিলে মজা করছিলাম তখন ওদের নিয়ে। যেমন "অনেক বাদাম ভাজা খেয়েছ এবার সংসার কর", "মন দিয়েছি তারে কিন্তু শরীর দেব অন্য রে" ইত্যাদি ।
স্কুলে যাওয়ার পথে শুনি বিয়ের দিনে মেয়েটি সুইসাইড করেছে । খুব জোরে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে পৌঁছে আরো শুনি সেই ছেলেটাও সুইসাইড করেছে । এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, কি করে সুইসাইড করল? বন্ধুটি বলল ঘুমের ঔষধ খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সেইজন্য কেউ টের পাই নি । পুলিশ ডেডবডি নিয়ে গেছে পোষ্ট মটাম করতে । আর কতগুলো বন্ধু আর স্কুলের দাদা আমাকে বলতে লাগল তোদের গ্রামের লোকেরা ছেলে মেয়ে দুজনকেই শেষ করে দিল । কি হয়েছে ? আজকাল তো সোস্যাল মিডিয়ার যুগ । ওখানেই চিঠিগুলো পড়ে দেখ। আমি তাড়াতাড়ি করে একটা বন্ধুর মোবাইলে চিঠিগুলো পড়লাম আর কেঁদে ফেললাম । মেয়েটার প্রথম চিঠি :
জেনেও তবু জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছো প্রিয়দা? কত আশায় স্বপ্ন বুনছিল দুটো জীব । হঠাৎই দমকা হাওয়া এসে দুজনকে ধরিত্রীর দুই কোণে করে দিল । আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে । কি করবে বলো এ সব তো ভাগ্যের পরিহাস । কতদিন বসেছি ঐখানে দুজনে কিন্তু কেউ কিছু বলেনি কোনোদিন। হঠাৎ ঐ দিন লোকদের কি যে হল আমাদের জীবনটাই শেষ করে দিল। যাক পড়াশোনা ভালো করে করো এবার এস এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে । বলতে পার প্রিয়দা, দোষটা ছিল কার ? আমাদের না সমাজের । আমরা তো শুধু পাশাপাশি বসে দুটো সুখ দুঃখের কথা বলিতাম ।
একদিনও কেউ মানা করে নি ।
প্রভুর এ কি যে খেলা, জীবন হতে তুলে নিল বাচার মায়া ।
কি বাই ছিল মোদের পাপ, নামের ওপর বসিয়ে দিল বদনামের ছাপ ।
যদি সেটা পাপই হয়, তবে ধ্বংস হোক সমাজ, আর ধ্বংস হোক সমাজের ভালোবাসা ।
দিন ঠিক হয়ে গেছে, পাঁচদিন পরে বিয়ে ।
অন্তরে প্রিয়দা বসে ,শরীর দিই অন্য রে কি করে ?
তাই ঘুমের বড়ি রেখেছি কাছে, জীবনকে দেব শেষ করে ।
মন যে এখনও আশামাখা, যদি হয় তোমার সাথে শেষ দেখা ।
আলিঙ্গনে করিব চুম্বন, মিটিয়ে নেব বিদায়ের পূর্বে মোর মনের ইচ্ছা ।
পরিস্থিতি বদলাবে এই ভেবে বাঁচছি কয়েক দিন,
জীবনটা মোর শেষ হবে সামনে বিয়ের দিন ।
প্রিয়দা তোমাকে দাঁড়াতে হবে তোমার বাবা মার পাশে । কত স্বপ্ন দেখেছে তারা । আমি মরার পরেও তোমারই দাসী হয়ে থাকব । পার যদি চিঠি দিও । যেন চিঠিটা কুসুমের হাতেই আসে । ও আমাদের বাড়ি প্রায়ই আসে ।
রাখলাম, যদি জীবনে কোন ভুল করি তোমার কাছে আমাকে মাফ কর ।
তোমার সাথী ।
প্রিয়র চিঠি,
এমন কথা বলে স্বাগতা, কেন তুমি তোমার নিষ্পাপ জীবনকে শেষ করবে?
ভালোবাসা যদি অপরাধ হতো,
তাহলে না হতে তুমি আর না হতাম আমি ।
সমাজে সবাই যদি ভালো হতো,
তাহলে সমাজে না বানত এত ভন্ডামি ।
আমি বাড়ির লোকের কাছে ছোট হয়ে গেছি । বাবা আর কথা বলে না । আসলে সমাজে মাস্টার মশাই তো, অনেকের কাছে মাথা হেট হয়েছে । মা শুধু খাবার সময় খেতে দিয়ে দেয় । আমার আর এখানে থাকতেই ইচ্ছে করে না । আমি জানি তোমার কাছ থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে । অনেকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন নাম্বারটা বন্ধ আসছে । যাইহোক আমি আজকে তোমার চিঠি পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, না জীবন শেষ করে লাভ নেই । চলো আমরা দূরে গিয়ে নতুন করে বাঁচব । যার হাতে চিঠিটা পৌঁছেছে ও হল কুসুমের বন্ধু, আমার পাড়ার ছেলে। ওকে রাজি করিয়াছি ও আমাদের সুলতান নগর ছেড়ে দিয়ে আসবে ওর বাইকে করে । তারপর আমরা বর্ধমানে চলে যাব । ওখানে আমার মাসি বাড়ি গিয়ে উঠব । তারপর আমরা ছোটো খাটো যে কোন কর্ম করে সংসার গড়ব । তুমি প্লিজ দেরি কর না । পরশু ঠিক দুপুর এক টা থেকে দুটোর মধ্যে পৌঁছে যেও বটতলার কাছে । আমি পলাশকে নিয়ে অপেক্ষা করব ।
জানো স্বাগতা ,
বাবার মুখে শুনতে পাই না আর 'বাবাই' ডাক ।
এত দিনের সম্মান হারিয়ে সে কি করে দেবে হাক ।
জীবন কিভাবে বদলে গেছে, যেন বদলে গেছে মানুষ সব ।
এখন মনে পড়ে সেই বাবার কথা, বাস্তব যে বড়ই কঠিন ।
পায়ে না দাঁড়াতে পারলে, সমাজ তোরে করিবে বিলীন ।
ভালো থেকো । উলঠ পালঠ চিন্তা কর না প্লিজ ।
ইতি
প্রিয়
তৃতীয় চিঠিটা ইন্টারনেটে পড়লাম এটা স্বাগতার লেখা যেটা স্বাগতার কাছে ছিল প্রিয়র কাছে পৌঁছায় নি । তাতে লেখা ছিল,
প্রিয়দা আমায় ক্ষমা কর আমি বটতলাতে পৌছাতে পারলাম না । আমার ভাগ্যে সুখ নেই গো । তোমার সাথে ঘর করার ইচ্ছা স্বপ্ন হয়ে রয়ে গেল । এরা তো আমাকে পালন করেছে এদের অধিকার আছে আমাকে বলি দেওয়ার । তোমার কথামতো আমি বেরিয়ে ছিলাম কিন্তু উপায় নেই অর্ধেক রাস্তায় ধরা পড়ে গেলাম । কুসুমকে আর বাড়িতে আসতে দেয় নাই । তাই চিঠি টা আর তোমার কাছে পৌঁছাবে নাকি জানি না । তবুও লিখে রাখলাম যদি সুযোগ পাই কখনো পাঠাতে তোমার কাছে ।
আমার বাচার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল । তুমি হয়তো অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছিলে তোমার স্বাগতার জন্য । প্রিয়দা তোমাকে বাঁচতে হবে তোমার বাবা মার জন্যে আর আমাদের ভালোবাসা দুনিয়াতে স্মৃতিচারণে ।
জানিতে কেবল ইচ্ছা করে ,বিধাতা বানায় কিভাবে মোদের আত্মা ।
নাহি মানতে চাই, নাহি দিতে চাই অন্য রে ঠাই
খুজি সেই প্রথম ভালবাসা ।
যদি বুঝত মোর বাবা মা, তাহলে দেখত মোর আত্মারে ।
লেখা আছে প্রিয়দার নাম, হয়েছে তারই মিলন মোর অন্তরে ।
ভালো থেকো । হতভাগীর ভাগ্যে এইটুকুই জীবন ছিল ।
শুধু তোমারই স্বাগতা
যেহেতু গ্রাম দুটো একই থানার অন্তর্গত ছিল তাই একসাথে পোষ্ট মটাম হয় দুজনের এবং দুইজনকে একসাথে রাত 10 টা নাগাদ দাহ করা হয় ।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
এক ভালোবাসার কাহিনী । দুই যুবক যুবতীর প্রেমের কাহিনী । তাহাদের বিরহের কাহিনী । বিয়ের দিন না বিরহের দিন তার সত্য কাহিনী ।
২৮ মে - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪